Tuesday, May 7, 2024

ভুয়া সাহেবের সাথে একদিন


 ধানমন্ডিতে অফিসের কাজ শেষে  স্প্রাইটের ২৫০ মি.লি এর বোতল কিনতে কিনতে "ওভাই" এর সিএনজি কল করলাম। বাসে উঠার শক্তি নাই, বাইকে উঠে ঘুমানোর একটা অদ্ভুত অভ্যাস আমার গত কয়েক বছরে হয়েছে। তাই এখন বাইকে উঠে ঘুমানোর ইচ্ছাও হলো না। গাড়ি,বাস,ট্রেন,রিক্সা,বাইক,প্লেন সব গুলাতেই ঘুমানো হয়ে গেছে এখন শুধু লঞ্চে ঘুমানো বাকি। লঞ্চে কখনো উঠা হয় নাই তাই ওখানে ঘুমানো হয় নাই। বিছানায় যেহেতু ঘুম আসে না সুতরাং একটা যানবাহন কিনে সেখানে ঘুমানো যায় কিনা সেটা চিন্তা করতে "জসিম উদ্দিন ভুয়া" নামের একজন "ওভাই" এর রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে।
ম্যাপে দেখলাম জাসিম উদ্দিন ভুয়া সাহেব কাটাবনের দিকে আছে। আমার ডেস্টিনেশন জানার পর ভুয়া সাহেবকে আরো উৎসাহী মনে হইলো। ৫ মিনিটের মধ্যে এসে হাজির। 
- ভাইয়া কই যাইবেন? 
- একটু আগে না বললাম? 
- ও হ! আসলে অনেক্ষন ধইরা খ্যাপ পাইতাছিলাম না ভাই। 
- হুম
- কোন দিক দিয়া যামু? 
- যেদিক দিয়া উইড়া যাইতে পারবেন ওইদিক দিয়া যান।
পিছনে ফিরে ভুয়া সাহেব মুচকি হাসি দিলো। এরকম অদ্ভুত নাম কেনো রাখা হইলো সেটা জিজ্ঞেস করা উচিত। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করলো না। জিজ্ঞেস করলেই মজা টা নষ্ট হয়ে যাবে। আপাতত "ভুয়া সাহেব" বলতেই একরকম পৈশাচিক মজা পাওয়া যাচ্ছে। কিছুক্ষন চুপ থাকলাম।  ততক্ষনে আমরা কাকরাইল পার হয়ে যাচ্ছি।
- যেই গরম পড়ছে,ভাই একটা সেভেন আপ খাওয়াইবেন? 
একটু থতমত খেয়ে গেলাম। আমার হাতে স্প্রাইটের বোতল দেখে মনে হইলো কিনা কে জানে। 
- আমার হাতে কিন্তু এটা স্প্রাইট, সেভেন আপ না।
- না ভাই, সেভেন আপের কথাই কইছি।
- সাইড কইরেন গাড়ি
আমি আর "ভুয়া সাহেব" সিএনজি থেকে নামলাম। ভুয়া সাহেবকে সেভেন আপ দিয়ে একটা পানির বোতল নিলাম। কিছুক্ষন কথা বলে বুঝলাম ভুয়া সাহেবের বাসা গোপিবাগ। বাসায় মা বউয়ের সাথে দুই ছেলে মেয়েও থাকে। তাদের মধ্যে মেয়ের কথা বলার সময় চোখটা উজ্জ্বল হয়ে যাওয়ায় বুঝলাম মেয়েটা তার খুবই পছন্দের।  এরকম পরিবারে মেয়ে বেশী পছন্দ হতে পারে দেখে খুবই ভালো লাগলো। লাবণি আর হালিমের জন্য দুইটা জুস কিনে দেওয়ার টাইমে গড়িমসি করলো।  গিফট দিলাম বলার পর হাতে নিলো। ও হ্যা, ভুয়া সাহেবের মেয়ের নাম লাবণি,ছেলের নাম হালিম। হালিম ক্লাস ২ এ পড়ে, লাবণি সামনে স্কুলে ভর্তি হবে।
সিএনজিতে উঠে আর একটা কথাও বললাম না। জীবনে খুশি হওয়ার জন্য  টাকা না, একটা হাশিখুশি পরিবার থাকলেই যথেষ্ট, সবার মুখে হাসি থাকাটাই যথেষ্ট। চিন্তা করতে করতে চোখে হালকা ঘুম চলে আসলো
কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখলাম চলে আসছি প্রায়। ভুয়া সাহেবকে এখন বলা দরকার নামের ব্যাপারে। নাহলে দেখা যাবে শুধু নামের জন্যই বেচারা ১-২* খাচ্ছে। লাবণি যখন জানতে পারবে তার বাবাকে সবাই ভুয়া বলে ডাকছে আর ১-২* দিচ্ছে তখন কি মনে করবে? 
- আপনার নাম কি যেনো ভাই? 
- জসিম
- পুরা নাম? 
- জসিম উদ্দিন ভুইয়া
- জসিম ভাই,নামের ওখানে মনে হয় "I" বাদ গেছে
- কোন নাম? 
- অ্যাপে। Jasim Uddin Vua হয়ে গেছে
কিছুক্ষন একটু চুপচাপ থেকে ভুয়া সাহেব অট্টহাসি দিলেন। আমিও হাসলাম
- ভাই ছবিটা সুন্দর না? 
বুঝলাম অ্যাপে তার ছবিটার কথাই বলছে। 
- হ্যা
- কি যুগ আইলো।  সবাই চেহারা নাম আগেই দেইখা ফালায়
- হ্যা, মনে করে নামটা ঠিক করে নিয়েন 
- জ্বী আচ্ছা ভাই। 
আবার ভুয়া সাহেবের অট্টহাসি। নাহ মনে হয় এখন ভুইয়া বলা উচিত। ভুইয়া সাহেব অট্টহাসি হাসি দিলেন। প্রানখোলা হাসি। এরকম হাসির দাম অনেক।


No comments:

Post a Comment

অফিস যাওয়ার পথে

 – বাজান, একটু দাঁড়াবা? অফিস বাসের স্টপেজটা আমার বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তাই প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট আগে বের হতে হয়। আজ সাত মিনিট আগে বে...