- ওই! ওই ভাইয়া!
রিক্সা থেকে নামার পর বুঝলাম কেউ পিছে থেকে ডাকছে। কান থেকে হেডফোন সরানোর ইচ্ছা করলো না। সোজা হাটা শুরু করলাম। রিক্সা থেকে মাঝপথে নামার কারণ একটু ঠান্ডা জায়গায় চুপচাপ বসে থাকা। এক কাপ রংচা হলে খারাপ হয় না।
- ওই!
পিছনে তাকালাম। বয়কাট দেওয়া একটা ছোট মেয়ে গায়ে হালকা ময়লা একটা ফ্রক পড়া।বয়স ৮-১০ বছরের বেশী হবে না। হাতে অনেক গুলা ছোটছোট ফুলের মালা। কি ফুল সেটা ঠিক বুঝলাম না। দেখলাম আমার একটু আগের কেনা সিঙ্গারার প্যাকেটটা ওর হাতে
- এইটা তোমার ব্যাগ। পইরা গেছিলো রিক্সা থেকা নামার সময়।
খেয়াল করলাম আমার হাতে ব্যাগটা নেই। কখন পড়লো টেরও পাই নাই। একটা ভ্যাপসা হাসি দিয়ে ব্যাগটা নিলাম
- থ্যাংক ইউ। তোমার....
আমার থ্যাংক ইউ শোনার তার সময় হলো না। ব্যাগ দিয়েই অন্য পাশে হালকা দৌড় দিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমি আবার হাটা শুরু করলাম। একটু সামনেই একটা ফুটপাত আছে। মানুষজনও এখানে খুবই কম। বসে থাকা যাবে। আশেপাশে শুধু ভাপা পিঠার দোকান ছাড়া কিছু নেই। একটু পরেই দেখলাম সেই পিচ্চি এসে আমার থেকে একটু দূরে বসলো। পিচ্চিটার নাম জানা থাকলে নাম ধরে ডাকা যেতো। নাম যেহেতু জানা নাই, পিচ্চি বলেও ডাকতে ইচ্ছা করলো না। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম যদি আমার দিকে তাকায় সেই আশায় কিন্তু সে আপন মনে টাকা গোনায় ব্যস্ত। আমি গান চেঞ্জ করার জন্য ফোন বের করলাম।
- তুমি ফুল লইবা?
- উহু
- ফুল দেওনের কেউ নাই?
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আবার মাথা নাড়ালাম।
- ওহ তাইলে ফুল লইয়া আর কি করবা?
এবার মাথা উচুনিচু করে নাড়ালাম।
- সিঙ্গারা খাবা তুমি?
- নাহ।
- কি নাম তোমার?
- সুমাইয়া
- এইগুলা কি ফুল?
- বেলীফুল
- কত করে?
- একটা ২০ ট্যাকা
- তোমার ফুল ভালো লাগে?
একটু ভ্রু কুচকে সুমাইয়া হ্যা মূলক মাথা নাড়ালো।
- আমাকে দুইটা দেও।
সুমাইয়া ফুল গুলো থেকে দুইটা বের করে আমার হাতে দিলো। একই সময় একটা লাল সাদা রংয়ের কুকুর এসে আমার পাশে এসে দাড়ালো।
- ভয় পাইয়ো না, এটা আমার লগেই থাকে।
- কি নাম ওর?
- হেহে! নাম নাই। এমনেই মাঝে মাঝে আমারে দেখলে আমার সামনে আহে।
- তোমার নাম ছাড়া কুকুর কি খায়?
- রুটি খায়! রুটি!
আশে পাশে তাকালাম। কোথাও কিছু নেই। খুজলে রুটি চা কিছু পাওয়া যাবে। এখন উঠতে ইচ্ছা করলো না। শুধু ভাপা পিঠা আছে। আচ্ছা কুকুর কি ভাপা পিঠা খায়?
- রুটি তো আশেপাশে নাই।
- ট্যাকা দেও। আমি কিন্না দিমু নে।
কিছু "ট্যাকা" সুমাইয়ার নাম ছাড়া কুকুরের খাবারের জন্য বের করে দিলাম। আর কুকুরের দিকে তাকিয়ে বললাম রুটি খাইস ঠিক আছে? গা ছাড়া দিয়ে হালকা ঘেউ করলো। হালকা ঘেউ আর জোড়ে ঘেউ এর পার্থক্য কি? ফুল গুলা সুমাইয়ার হাতে দিলাম
- ফুল গুলো তোমাকে দিছি কিন্তু। বেইচা দিও না আবার।
- হিহি
সুমাইয়া দৌড় দিলো। ওরা খুব সহজেই খুশি হয়ে যায়। নামছাড়া কুকুরটাও পিছু নিলো। ওর একটা নাম দেওয়া দরকার। খেয়াল করলাম ওর আসলে বয়কাট না, মাথার সামমে চুল চোখ পর্যন্ত নামানো। সুন্দর করে কাটা।
নভেম্বরের শেষের দিকের এই সময়টায় একটা ছুটি ছুটি ভাব থাকে। ঠান্ডা বাতাসেও ছুটির একটা গন্ধ ভেসে বেড়ায়। স্কুলে থাকলে এই সময়টায় ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি চলতো। তার চেয়ে বেশী প্রস্তুতি চলতো ফাইনাল পরীক্ষার পরে কিভাবে সময় কাটাবো সেটা নিয়ে। একটু সামনেই হালকা আলোয় দুইটা পিচ্চি হুজুর ব্যাডমিন্টন খেলছে। একজন অবশ্য এক হাতে লুঙ্গি ধরে আরেক হাতে র্যাকেট ধরে খুব কষ্ট করে খেলছে। যেকোনো সময় ধপাশ হয়ে যেতে পারে।পরীক্ষার শেষে এইভাবেই হাতে র্যাকেট নিয়ে আমরাও বের হয়ে যেতাম
রঙচার বদলে এখন দুধ চা খাওয়ার ইচ্ছা জাগলো। ভাপা পিঠার সাথে দুধ চা খারাপ হবে না। উঠে দাড়ালাম। পরিষ্কার আকাশ আর ঠান্ডা বাতাস। নিষ্ঠুর চুপচাপ চারদিক। এরচেয়ে সুন্দর আর কিছু আছে?
No comments:
Post a Comment