আজিমপুরে মাগরিবের নামাজ পরে সোজা শহীদ মিনারের দিকে রওনা দিলাম, খুব বেশী একটা দূরে না, এছাড়া ছুটির দিনে সন্ধ্যার পর শহরে একা হাটার মজাটাই আলাদা। খুব বেশী মানুষের শোরগোল থাকে না, রিক্সাতে অনেকে ঘুরে বেড়ায়, অনেকে ঘোরাঘুরি শেষে বাসায় যায়। একা কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকা যাবে এই চিন্তা করতে করতে যখন শহীদ মিনারের দিকে আসলাম, মনে হলো ঢাকা শহরের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ এখানেই, একা বসে থাকা তো দুরের কথা, একজন বসার জায়গাও নাই। আশেপাশে চটপটি, ফুস্কা আর আইস্ক্রিমের দোকান যেগুলার একটাও আমার পছন্দ না। চায়ের টং খুজতে লাগলাম। একটু হাটলেই ঢাকা মেডিকেলের সামনে অনেক টং পাওয়া যাবে কিন্তু আপাতত ওইদিকে হাটার ইচ্ছা নাই। ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার বিপরীত রাস্তায় হাটা হয় নাই কখনো, ওইদিকে হাটা শুরু করতেই সামনেই একটা টং। একজন বয়স্ক চাচা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে তার বাটন ফোনে হয়তো কারো নাম্বার খুজতেছে, একটা রঙ চা এর অর্ডার দিয়ে একটু সাইডে দাড়ালাম। চায়ের অর্ডার দেওয়া দেখে চাচা খুবই আস্তে করে কিছু বললো, গাড়ীর প্যা পোতে সেটা ভালোমতো শোনা গেলো না।
- কিছু বললেন চাচা?
- নাহ
- আচ্ছা
- আপনার পাঞ্জাবিটা সুন্দর
এটার উত্তর কিছু দেওয়ার থেকে মুচকি হাসাটাই ভালো, সেটাই করলাম,চা আসতে বেশী সময় নিলো না। চায়ে কিছু একটা পাতা দেওয়া হয়েছে, উপরে ভাসা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সেটা কি পর্যবেক্ষণ না করে চায়ে চুমুক দিলাম
- এরকম চিনি দুধ ছাড়া চা খাইয়া লাভ কি?
ওদিকে মনোযোগ দিলাম না, চুমুক দেওয়ার পর বুঝলাম চায়ে ব্যাটা মধু দিয়ে অখাদ্য বানায় ফেলছে। যদিও এই অখাদ্য বাসায় প্রায়ই খাই কিন্তু পাতাপুতা আর এলাচির সাথে মধুর টেস্ট আজকেই প্রথম নিলাম। আসলেই একবার মাথায় আসলো চিনি দুধ দিয়ে চা নিলেই ভালো হতো
- চাচা মনে হয় আসলেই লাভ নাই
- তো খান কেন? চা আবার এম্নে খায় নাকি, এম্নে খাইলে গরম পানি খাইলেই পারেন
এটাও খারাপ বলে নাই, গরম পানিও খাওয়া যাইতো। কিন্তু এই অখাদ্যটা কেমনে শেষ করা যায় সেটা তখন মাথায় ঘুরতেছিলো।
- গরম পানিতে তো লিকার থাকে না
- লিকার সহ খাইলে দুধ চা খাইলেই পারেন
- ঠিক আছে চাচা মাথায় থাকবে
- আজকালকার পোলাপান, করল্লা খাইতে পারে না কিন্তু লিকার সহ চিনি ছাড়া চা খাইবো
- না চাচা আমি করল্লা খাই, একচুয়েলি আমার ভিতরে সবই তিতা, মিষ্টি পেটের ভিতরে গেলে সমস্যা হয়।
চাচা একটু চুপ হয়ে গেলো, কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। কথাটা সিরিয়াসলি নিলো নাকি মজা হিসেবে নিলো সেটা বোঝা গেলো না। আমার অখাদ্য খাওয়া প্রায় শেষ। চাচা এখনো খালি কাপ হাতেই দাড়িয়ে। চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে চায়ের কাপ ফেরত দিলাম।
- চাচা আসি তাহলে, পাঞ্জাবী সুন্দর বলছেন সেজন্য থ্যাংক ইউ আর গরম পানির বিষয়টা মাথায় থাকবে
চাচা "তো আই কি কত্তাম" ভংগিতে হাসি দিলো। আমি হাটা শুরু করলাম। সামনে কয়েকটা রিক্সা দাঁড়ায় আছে। এইরকম খালি রাস্তায় রিক্সায় চড়তেও মজা।
আজকের চাঁদটা বিশাল। পুর্নিমা আজকে? না বোধহয়...
No comments:
Post a Comment