বাসে করে অফিসে যাচ্ছি। কমলাপুর পার হতেই এক বাচ্চা সহ একজন আপু বাসে উঠলো। নিয়ম অনুযায়ী বাসে ২ সিটে একজন করে বসার তাই ব্যাগ সাইড সিটে রেখে কানে হেডফোন দিয়ে জানালার দিকে হেলান দিয়ে বসে আছি। বাসে বসার জায়গা না থাকায় সামনের সিটের আন্টির সাথে একসাথে বসার বন্ধোবস্ত করার আপু আশেপাশে তাকালো ছেলেটাকে কোথাও বসানো যায় কিনা সেটার ব্যবস্থা করার জন্য। ছোট বাচ্চা আমার খুব একটা সহ্য হয় না তাই আপু কি করতে চাচ্ছে বুঝতে পেরে আমি আর ওইদিকে তাকালামই না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম
- ভাইয়া ও কি এখানে একটু বসতে পারবে?
উনি আগে অথবা এখন হয়তো কোনো স্কুলের টিচার, যে ছাত্র টিচারের চোখে চোখ রাখে না পড়া ধরবে দেখে, এই টাইপ টিচার ওই ছাত্রকেই পড়া ধরবে
- জ্বী প্লিজ!
- দিহান বাবা ওনার সাথে বসো, এদিকে আসো
দিহান নামের ছেলেটা আমার সাথে এসে বসলো, ছেলেকে বসাতে পেরে আপুও সামনের সিটে আন্টির সাথে বসে পড়লো। দিহানের প্যান্টটা জিন্সের, লাল রংয়ের জামাও পড়া, আমার দিকে ঢ্যাপঢ্যাপ করে তাকিয়ে থাকায় আমি কানে হেডফোন নিয়ে জোরে গান ছাড়লাম। বাচ্চারা খুবই আজাইরা প্রশ্ন করে। বাস মালিবাগ ক্রস করলো দিহান এখনো আমার দিকে ঢ্যাপঢ্যাপ করেই তাকিয়ে আছে। আমি ফোনটা একটু নিচে নিলাম যাতে ফোকাস আমার থেকে ফোনে চলে যায়। কিন্তু সে আমার দিকে, আমার চশমার দিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে, হেডফোন খুললাম
- তোমার নাম দিহান?
- হ্যা
- কোন ক্লাসে পড়ো?
- ফাইভে
- আচ্ছা
- তুমি?
- আমি কিছুতেই পড়ি না
- পড়ালেখা করো না?
- নাহ
দিহানের মা একটু পর পর পিছনে তাকাচ্ছে, কন্ডাকটর ভাড়া নিতে আসলো, ভাড়া দিয়ে স্যানিটাইজার হাতে নিলাম, সে স্যানিটাইজারের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
- এটা কি?
- স্যানিটাইজার
- আমাকে দেও
ওর হাতেও অল্প দিলাম, সে আমি যেভাবে মালিশ করলাম ঠিক সেভাবেই মালিশ করলো
- তুমি পড়ালেখা করো না কেনো?
- পড়ালেখা করে লাভ নাই যে সেজন্য
দিহানের মা আবার পিছে তাকালো, পিচ্চিকে পাশ থেকে সরানোর বুদ্ধি ততক্ষনে মাথায় চলে আসছে
- পড়ালেখা যারা করে ওরা বোকা হয়, চালাক মানুষরা পড়ালেখা করে না।
- দিহান বাবা এদিকে আসো তো।
আপু পিচ্চিকে সামনের সিটে নিয়ে নিজের কোলের উপরে বসালো৷ আমি আবার আমার ব্যাগ সাইড সিটে রাখলাম, কানে হেডফোন দিলাম। হেডফোনে Owl City এর Fireflies গানটা বাজছে
"Cause everything is never as it seems"
No comments:
Post a Comment