Monday, August 11, 2025

অনুভুতি বনাম বাস্তবতা

 আজকে অনেকদিন পর আমি যে অনুভুতিলেস মানুষে পরিণত হয়েছি তার আরো একবার প্রমান পেলাম।  আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের টেক্সট। 

- তোর সাথে কথা আছে

- কি রিলেটেড

- ঘুমায় যাইস না। একটা কাজ করতেছি। করে ফোন দিচ্ছি।

- বলতো কি রিলেটেড, ঘুমায় যাইতেও পারি। চোখ অফ হয়ে আসতেছে

- ভাই! আমি কাদতেছি

একটু হকচকিয়ে গেলাম। 

- আছি আমি, আয় তুই।

৫-১০ মিনিট পরে বন্ধুর ফোন, ফোন রিসিভ করার পর বাচ্চা মানুষের মতো কাদা শুরু করলো। আমি এইসবে খুব একটা অভ্যস্ত না। এইরকম ভাবে আমি শেষ কাদছিলাম ৭ বছর আগে। যখন আমি আমার জানের চেয়ে প্রিয় মানুষকে হারাই। সো স্বভাবতই ভিতরটা গুমরে উঠলো।

- কি হইছে

ধরা যাক আমার বন্ধুটার নাম নিলয়। 

নিলয় বাচ্চাদের মতো কেদেই চলতেছে।

- আরে বাল, বলবি তো কি হইছে?

- তোর রিয়ার (ছদ্দনাম) কথা মনে আছে?

নামটা পরিচিত,কিন্তু মনে করতে একটু সময় লাগলো।

- এটা কি ওই (একটা) ইউনিভার্সিটির না?

- হ্যা

- কি হইছে?

- ও আমার সাথে চিট করছে, ওর আরেকজনের সাথেও রিলেশন আছে। আমি মাত্র জানতে পারলাম।

কেউ একজন তার মন থেকে কাউকে পছন্দ করলে ওর এতটা খারাপ লাগবেই এই সিচুয়েশনে। লাগাটাই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আমি যে অনুভুতি শুন্য আমার কাছে এই রিজনে এভাবে কান্না করাটা খুবই বেখাপ্পা লাগলো। কোনো।মতে নিজেকে এই কোয়েশ্চন করা থেকে বিরত থাকলাম "যে এটা কোনো কান্না করার রিজন হইলো?" 

মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলাম। আমার বন্ধুর মনটা খুবই নরম। জানালো ৩ বছর ধরে এই মেয়েকে পছন্দ করে, বিদেশ পর্যন্ত যায় নাই ওই মেয়ের জন্যই। আজকে জানতে পারলো ওই মেয়ে আরেকজনের সাথে রিলেশনে ছিলো।

আমার জীবনের গল্পে এগুলোর জন্য কোনো খারাপ লাগা নাই। সুতরাং ওকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য আমি খুবই খারাপ একটা চয়েস। ইমোশনাল মোমেন্টে বাস্তবতা নিয়ে কথা বলা যায় না। কারণ বাস্তবতা বুঝলে মানুষ কখনো ইমোশনাল হয় না। আর ইমোশনাল হলে কেউ বাস্তবতা বুঝতে চায় না। 

আমার জীবনে কিছু রুল আছে যেটা আমি কখনো ভাঙিনা।আমি কাউকে আমার লাইফে থাকার জন্য জোর করি নাই। করি নাই বলতে করি নাই। বুক ফেটে গেলেও বলি নাই। আমার সাইকোলজি এভাবে কাজ করে, "আমি চেষ্টা করবো মানুষকে রাখার, সর্বোচ্চ চেষ্টা। কিন্তু তারপরেও কেউ থাকবে কিনা আমার লাইফে সেটা তার ব্যাপার। আমরা জোর করে কাউকে রাখতে পারি না। যে চলে যাওয়ার সে এমনেই যাবে আর যে থাকার সে এমনেই থাকবে" 

যে জিনিস আমরা করতে পারি সেটা হলো মেনে নেওয়া। কেন হইলো, আমার সাথেই কেনো হইলো এগুলো সারাজীবনের প্রশ্ন।  এগুলো যদি করি, করতে করতেই জীবন পার হয়ে যাবে। কপালে নাই মানে নাই, এটা এক্সেপ্ট করে এগিয়ে যাওয়া। বুক ফেটে গেলেও তাকে আর কিছু না বলা। আমার সাইকোলজির সাথে সবার মিলবে না সেটাও সত্য। কিন্তু আমার সাইকোলজি আমারই।

আমি আমার সাইকোলজি বোঝানোর চেষ্টা করলাম না। কান্না করা ব্যক্তিকে বাস্তবতা বোঝাতে হয় না।

অনেকে হয়তো মনে করতে পারে, ৭ বছর আগে হারানো প্রিয় মানুষটা কে? 

আমার ভাই।


Friday, June 27, 2025

অফিস যাওয়ার পথে


 – বাজান, একটু দাঁড়াবা?
অফিস বাসের স্টপেজটা আমার বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তাই প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট আগে বের হতে হয়। আজ সাত মিনিট আগে বের হয়েছি, তিন মিনিট কম। অফিসগামীদের কাছে সকালের এক মিনিটও অনেক মূল্যবান তা সবাই জানে।
রিকশা থেকে নেমে হালকা দৌড় শুরু করলাম বাস ধরার জন্য। গিয়ে দেখি বাস তখনও আসেনি। হাঁটাহাঁটি করার মাঝখানে পিছন থেকে ডাক পড়ল।
একজন বয়স্ক মানুষ, সাদা প্যান্ট আর সিলভার রঙের শার্ট পরা। ইন করা পোশাক, মাথায় টুপি, চোখেও সিলভার কালারের চশমা। খুব সম্ভবত উনিও অফিস যাচ্ছেন।
– জি আঙ্কেল, বলেন।
– সরি বাজান, তাড়ার মধ্যে ছিলা। এমনিই ডাক দিলাম, কিছু না।
বাস তখনও আসেনি, দাঁড়িয়ে থাকতেই পারি।
– না সমস্যা নেই, বলেন।
– তুমি চাকরি করো বাবা?
– জি।
– তোমার মতোই চেহারা, হাইট, সবকিছুর মিল আমার ছেলের সাথে। কয়েক বছর ধরে ডেনমার্কে থাকে। পেছন থেকে দেখেই বুকটা কেমন ধরফড়ায় উঠল। মনে হলো আমার ছেলেই!
উনি খুব সম্ভবত পুরান ঢাকার মানুষ, কথার ভঙ্গিতে বোঝা যায়। আমি ওনার কাঁধে হাত রাখলাম।
– কথা হয় না ওর সাথে?
– হয় বাবা, দুই তিন দিন পরপর হয়। গতকালও হয়েছে।
– ওনাকে দেশে আসতে বলেন, আপনাকে নিয়ে যাক।
উনি কিছু বললেন না, শুধু হাসিমুখে মোবাইল বের করলেন ছেলের ছবি দেখানোর জন্য। দূরে দেখি আমার বাস চলে আসছে। তিনি ফোন এগিয়ে দিলেন। ছবিতে হাস্যজ্জ্বল বাবা-ছেলের ছবি। দ্রুত দেখে নিলাম। আমার মতো না—আমার চেয়েও ভালো দেখতে। ছবিটা সুন্দর। ছবিটার কারণেই আরো অনেক সুন্দর লাগলো দুজনকেই।
– আঙ্কেল, আপনার ছেলে আমার মতো না, আমার চেয়ে অনেক সুন্দর। আর এই ছবিটাও। আমি তাহলে উঠি? বাস চলে আসছে।
উনার মুখটা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। লম্বায় খানিকটা ছোট হওয়ার কারণে এক পাশে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও জড়িয়ে ধরলাম।
বাসে উঠে জানালার পাশে বসলাম। এই বয়সী লোকদের মাঝে আমি এখনোও আব্বাকে খুঁজে বেড়াই। আব্বা বেঁচে থাকলে হয়তো উনার মতোই হতেন। তাই এই বয়সের কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরলে মনে হয় আমিও জড়িয়ে ধরে রাখি। 
হুমায়ূন আহমেদের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ল—
"পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই।"
এই কথার কতটা সত্যতা আছে তা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। শুধু জানি, বাবারা সুপারহিরো হয়।
তাঁরা বটবৃক্ষের মতো। আর বটগাছ না থাকলে, তার মর্ম তখন বোঝা যায়।

Monday, June 9, 2025

মানুষের মন: রহস্যময় জগৎ ও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব

 


কফি খেতে খেতে চিন্তা করছিলাম মানুষের মন একটা অদ্ভুত বিষয়। আমরা প্রতিদিন হাজারো চিন্তা করি, নানা আবেগ অনুভব করি, সিদ্ধান্ত নিই, আবার কখনো কখনো এমন কিছু করি যা পরে ভাবলে নিজের কাছেই অবাক লাগে। কিন্তু এসব কিছুর পেছনে যে জিনিসটি কাজ করে, সেটা হলো আমাদের মন

এখন প্রশ্ন আসতে পারে মনের কাজ কী?

আমাদের মস্তিষ্ক যেন একটা সুপারকম্পিউটারের মতো কাজ করে। এটি শুধু তথ্য সংগ্রহ বা বিশ্লেষণই করে না, বরং আমাদের আবেগ, চিন্তা, আচরণ, এবং সম্পর্ক—সবকিছুর উপর প্রভাব ফেলে।

মনকে আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু তার প্রভাব আমাদের জীবন জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সুখে থাকি, দুঃখে থাকি, রেগে যাই বা কারো প্রতি ভালোবাসা অনুভব করি—এসব সবই মনের খেলা।


চিন্তা কি? – এটি প্রতিদিনের সঙ্গী

গবেষণা বলছে, একজন মানুষ দিনে গড়ে প্রায় ৬০,০০০টি চিন্তা করে। এর অনেকগুলোই হয় পুরনো স্মৃতি, দুশ্চিন্তা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা।

কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন চিন্তা অতিরিক্ত হয়ে যায়। তখন সেটি আমাদের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। আমরা বিভ্রান্ত হই, আতঙ্কিত হই বা নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি।


এখন বলা যাক নেগেটিভ চিন্তা কেন আসে?

অনেক সময় আমরা নিজের অজান্তেই নেগেটিভ চিন্তায় ডুবে যাই। মনে হয়, “আমি পারব না”, “সবাই আমাকে ভুল বোঝে”, “ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ভয় লাগছে”।

এর পেছনে একটি কারণ আছে। আমাদের মস্তিষ্ক প্রাকৃতিকভাবে নিরাপত্তা খুঁজে বেড়ায়। কোনো সমস্যার সম্ভাবনা থাকলে আগে থেকেই সতর্ক হতে চায়।

কিন্তু এই নিরাপত্তা-বোধ যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন তা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, মন খারাপ করে দেয়, এবং জীবনের আনন্দ হারিয়ে যায়


হতাশা ও মানসিক চাপ

বর্তমান যুগে হতাশা বা স্ট্রেস একেবারে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসের চাপ, পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক প্রত্যাশা সব মিলিয়ে আমাদের মন প্রায়ই ভারাক্রান্ত থাকে।

মন খারাপ থাকা, ঘুম না আসা, আগ্রহের অভাব, একা লাগা এসব হল হতাশার প্রাথমিক লক্ষণ। সময়মতো বুঝতে পারলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়।


আবেগ বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করা

রাগ, দুঃখ, আনন্দ, ভয়—এসব আবেগ আমাদের জীবনের অংশ। আবেগ থাকা খারাপ নয়, বরং আবেগের মাধ্যমে আমরা মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করি।

তবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। যেটা আমি পারি না। তবে স্টাডি করার পর যেটা বুঝলাম যদি রাগে চোখ অন্ধ হয়ে যায়, বা দুঃখে সব কিছু তুচ্ছ মনে হয় তাহলে তা আমাদের ক্ষতি করে।

যতটা সম্ভব, আবেগ বুঝে তবেই প্রতিক্রিয়া দেওয়া শিখতে হবে। এতে সম্পর্ক ভালো থাকে এবং নিজের মানসিক শান্তিও বজায় থাকে।


সম্পর্ক গঠনে মনের ভূমিকা

মানুষ সামাজিক প্রাণী। আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করি যেমন বন্ধুত্ব, পরিবার, সহকর্মী, প্রেম সবই আমাদের আবেগের মাধ্যমে গড়ে ওঠে।

মন দিয়ে শোনা, অন্যের অনুভূতি বোঝা, এবং সহানুভূতি প্রকাশ করা এই তিনটি বিষয় সম্পর্কের ভিতকে মজবুত করে।

একজন মানুষ যদি শুধু নিজের কথা বলে, কিন্তু অন্যকে না বোঝে—তবে সে সহজে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারে না।


এখন আলোচনা করা যাক মন ভালো রাখার কিছু সহজ উপায় নিয়ে:

১. নিজের জন্য সময় রাখুন: প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট নিজের সঙ্গে কাটান।
২. গভীর শ্বাস নিন বা মেডিটেশন করুন: এটি মন শান্ত রাখে।
৩. পছন্দের গান শুনুন বা হাঁটতে বের হন: মনের জঞ্জাল দূর করে।
4. যা আছে তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকুন: একটা জিনিস সব সময় মনে রাখবেন কৃতজ্ঞতা অনুভব করলে মন বেশি শান্ত থাকে।
৫. মোবাইল কম ব্যবহার করুন: স্ক্রিন টাইম কমালে মন বেশি ফোকাসড থাকে।


নিজেকে জানাই প্রথম ধাপ

নিজের মনকে বোঝা, নিজের ভালো-মন্দ চিন্তা ও আবেগ চিনে নেওয়া—এটাই সেলফ অ্যাওয়ারনেসের প্রথম ধাপ। এই অভ্যাস গড়ে তুললে জীবনে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, সম্পর্ক ভালো হবে, এবং আপনি নিজেকেই আরও ভালোভাবে ভালোবাসতে শিখবেন।


উপসংহার

মানুষের মন সহজ নয়, কিন্তু যতটা মনে হয় ততটা জটিলও নয়। একটু বুঝে, একটু যত্নে, মনকে ভালো রাখা যায়।
নিজের মনকে যত্নে রাখুন, কারণ এখান থেকেই শুরু হয় আপনার পৃথিবী।

অনুভুতি বনাম বাস্তবতা

 আজকে অনেকদিন পর আমি যে অনুভুতিলেস মানুষে পরিণত হয়েছি তার আরো একবার প্রমান পেলাম।  আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ডের টেক্সট।  - তোর সাথে কথা আছে - কি ...