প্রথম যেদিন মাকে বললাম অনন্যা আমাকে পছন্দ করে না, মা অবাক হয়ে ছিলো। কারণ মার কাছে তার ছেলেরা সবসময় সবচেয়ে সুদর্শন। আমার মার কাছেও আমি হয়তো সেরকম। তার ধারণা আমার মতো ছেলেকে আবার কেউ পছন্দ না করতে পারে নাকি। বাবাকে বলতে পারি নি কারণ সেটার সাহস আমার এখনো হয়নি।
অনন্যার
কথা বলার আগে আমি
আমার ব্যাপারে বলি। আমি রিফান।
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র। অনন্যা
আমার থেকে দুই বছরের
জুনিয়র। আমার এখনো মনে
পড়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বিরক্ত হয়ে যখন আমি
ভাবলাম পড়ালেখা থেকে কিছুদিন দূরে
থাকবো তখন এডমিশন অফিসে
নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফর্মে প্রথম ওর ছবি দেখলাম।
আমার চোখ কখনো কারো
ছবিতে আটকায় না, ওর ছবিতে
আটকালো, দূর থেকে অনেকক্ষন
তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। ছবিটা ফরমাল পাসপোর্ট সাইজের ছবি ছিলো না,
ক্যাসুয়াল ছবি ছিলো। বোধহয়
ওর কলেজেই তোলা। একটা গাছের সামনে। আমি
আমার সকল ব্যর্থতা, সকল
সমস্যা যার কারণে পড়ালেখা
থেকে কিছুদিন বিরতি নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম সব কিছু যেনো
মুহুর্তে ভুলে গেলাম। ওকে
দেখার জন্য আকুল হয়ে
রইলাম। এখন
নতুন শিক্ষার্থী দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার
অপেক্ষা। প্রথম অপেক্ষার শুরু। এই অপেক্ষা আনন্দের।
প্রথম
যখন অনন্যাকে দেখলাম, ও লাল রঙয়ের
একটা জামা পড়ে ছিলো।
খোলা চুলের অনন্যাকে দেখে আমার দুনিয়া
মুহুর্তের জন্য থেমে গেলো।
আমি "লাভ অন ফার্স্ট
সাইটে" বিশ্বাসী না হলে হয়তো
বলতাম প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে গেলো। অপেক্ষা
করি। ওর সাথে কথা
বলার অপেক্ষা। অপেক্ষার দ্বিতীয় প্রহরের শুরু। আপাতত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে রাখি সোশ্যাল মিডিয়াতে।
খুশি হলাম এক্সসেপ্ট করলো
দেখার পর।
এরপর
কি হলো সেটা না
হয় অজানাই থাকুক। সব কিছু সব
সময় বলতে হয় না।
ওর সাথে আমার কথা
হয় না অনেকদিন। ভালোমতো
কথা আর কি। আমি
যখন তাকে প্রথমবার ভালো
লাগার কথা বললাম সে
হেসে উড়িয়ে দিলো। বলা যায় পাত্তাই
দিলো না। এরকম কথা
শুনে হয়তো অভ্যস্ত। যখন
আমি তাকে বললাম সে
আমার শেষ ভালোবাসা সে
আমাকে জিজ্ঞেস করলো এই কথা
আমি কয়জনকে বলেছি। বিশ্বাস করলো না। কিন্তু
এই কথা আমি তাকেই
প্রথম বলেছিলাম। সে এটা কখনোই
জানলো না। আস্তে আস্তে
দূরে সরে গেলো। গল্পের
শেষটা এখানেই হয়তো হতে পারতো যদি
আমি সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করতাম । আমি করলাম না। ওইযে বলেছিলাম সে আমার
শেষ ভালোবাসা। তখন কি মনে করে বলেছিলাম জানি না তবে এই কথাটা এখন বাস্তবের সাথে মিলে
যাচ্ছে।
“ আমি তাহাকে ভুলিলাম না, হৃদয়ের অন্তস্থলে
যতন করিয়া রাখিয়া দিলাম”
আমি এখনো ক্লাসে
উকি মেরে তাকে দেখি, তবে লুকিয়ে লুকিয়ে ! তার চোখে চোখাচোখি হওয়ার রিস্ক নেই না। সেটা
খুবই ভয়ংকর। আমি যতবারই লজ্জাশরমের মাথা খুইয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি তার
প্রধান দুই কারণ তার চোখ এবং তার হাসি। এগুলো দেখলেই ইচ্ছে করে তার যে আমাকে অপছন্দ
এই কথা ভুলে যেতে। আবার কথা বলতে ইচ্ছে করে। তবে এবার আমি তাকে বিরক্ত করবো না। দূর
থেকেই দেখে যাবো । আমার খুব ভালো লাগে তাকে দেখতে। তার নাম অনন্যা কারণ তার মতো কেউ
নেই। শাহরুখ খানের ভীর জারা মুভিতে একটা লাইন আমার মাথায় প্রায়ই আসে “ এমন না যে আমি
তাহার মতো সুন্দর কাউকে দেখি নি, তবে সেই আমার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর মানুষ” আসলেই
সেই আমার কাছে অনন্যা, তার তুলনা নেই ।
আমি এখনো অপেক্ষা
করি তার। কারণ ছাড়া অপেক্ষা। আশা ছাড়া অপেক্ষা, এই অপেক্ষার কোনো শেষ নেই তবুও অপেক্ষা
। আমরা জোর করে কাউকে ভালো বাসাতে পারি না, যদি পারতাম তাহলে তাকে ধরে রাখতাম, জোর
করে ভালোবাসাতাম। যেহেতু পারি না সুতরাং তাকে ধরে রাখার চেস্টা করলাম না, করেও হয়তো
লাভ হতো না। আমি হয়তো তার ক্লাসের বাইরে বসে তার অপেক্ষা করতাম কিংবা তার বাসার নিচে
একটা মাদুর নিয়ে বসে পড়তাম। জোর করতাম, কিন্তু সকল মানুষের সুন্দর জীবনের আশা থাকে,
আমার অনন্যারও আছে। সে আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে অথবা আমাকে নিয়ে ওইটা তো একান্তই তার
ব্যাপার। আমি দূর থেকে সে কেমন আছে বোঝার চেষ্টা করি। তবে ভালো থাকলেই হলো, আপাতত আমি অপেক্ষা করি, মহাকালের অপেক্ষা শেষ কবে
হবে? আদৌ কি হবে কখনো?
No comments:
Post a Comment